Published at: Bonik Barta, 23 February, 2019
সদ্যসমাপ্ত হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) জীবন বীমা খাতের ৩২টি কোম্পানির সচল পলিসির সংখ্যা ১ কোটি ৮ লাখ ৯৬ হাজার ১৯টি। এর মধ্যে নতুন পলিসির সংখ্যা ১০ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৪টি। আর নতুন পলিসি অর্থাৎ নতুন ব্যবসা সংগ্রহের দিক থেকে এগিয়ে আছে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে নতুন ব্যবসা সংগ্রহে কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমকে হতাশাজনক হিসেবে দেখছে আইডিআরএ। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন, যুগ্ম সচিব) খলিল আহমদ বণিক বার্তাকে বলেন, জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান দশমিক ৫৫ শতাংশের মতো। ২০২১ সালের মধ্যে তা বাড়িয়ে ৪ শতাংশে উন্নীতকরণের নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে রয়েছে। তবে নতুন ব্যবসা সংগ্রহে কোম্পানিগুলো যদি আরো মনোযোগী না হয়, তাহলে জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান কখনই বাড়বে না।
আইডিআরএর তথ্য অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ব্যবসা সংগ্রহে এগিয়ে থাকা পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নতুন পলিসির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৬৪৩টি। কোম্পানিটির মোট সচল পলিসি ৭ লাখ ২১ হাজার ৩৬৩টি। আলোচ্য সময়ে গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের দিক থেকেও ভালো অবস্থানে রয়েছে এ কোম্পানি। তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ৬২৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। যার মার্কেট শেয়ার ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ। জানা গেছে, ২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৭ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। ২০১৬ সালেও ৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পান এ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৬ কোটি ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৮টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালক ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ, প্রতিষ্ঠান ৬ দশমিক ৩৫, বিদেশী বিনিয়োগকারী শূন্য দশমিক ২১ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৬৪ দশমিক ৫২ শতাংশ শেয়ার।
নতুন ব্যবসা সংগ্রহে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি মেটলাইফ। কোম্পানিটির সচল পলিসির সংখ্যা ১২ লাখ ৯১ হাজার ৪৭টি। এর মধ্যে নতুন পলিসি ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯২৫টি। এদিকে তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। যার মার্কেট শেয়ার ৩৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জানা যায়, বাংলাদেশের বীমা বাজারে মেটলাইফের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫২ সালে। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের ৫০টি দেশে এর ব্যবসা রয়েছে।
নতুন ব্যবসা সংগ্রহে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সচল পলিসির সংখ্যা ১৭ লাখ ১৬ হাজার ২৫৮টি। এর মধ্যে নতুন পলিসি ১ লাখ ২০ হাজার ৫৮৭টি। তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির গ্রস প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ৪০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, যার মার্কেট শেয়ার ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
জানা যায়, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৫ সালে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ২০ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয় এ কোম্পানি। ২০১৬ সালেও একই পরিমাণ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। ২০১৫ সালে ২০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ পান এ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১০ কোটি ৮৫ লাখ ২১ হাজার ৯৮১টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালক ৮২ দশমিক ৬৫ শতাংশ , প্রতিষ্ঠান ১০ দশমিক শূন্য ১ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ শেয়ার।
নিয়ন্ত্রণ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নতুন পলিসির সংখ্যা ৯৯ হাজার ৩৩১টি। কোম্পানিটির মোট সচল পলিসি ১৩ লাখ ৯২ হাজার ২০৯টি। এদিকে তিন প্রান্তিকে এ কোম্পানির মোট প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ৬৪৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যার মার্কেট শেয়ার ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এ কোম্পানি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পান এ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা। ২০১৬ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। ২০১৫ সালে ৩৯ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পান ফারইস্ট লাইফের বিনিয়োগকারীরা। এ কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৭ কোটি ৪৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৫১টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালক ৩১ দশমিক ২৬ শতাংশ, প্রতিষ্ঠান ৩৭ দশমিক ৮৮, বিদেশী বিনিয়োগকারী ২ দশমিক ৮৩ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ২৮ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ শেয়ার।
এদিকে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সচল পলিসির সংখ্যা ১৯ লাখ ৯ হাজার ২১২টি। এর মধ্যে নতুন পলিসি ৯১ হাজার ৪৩২টি। জানা যায়, সদ্যসমাপ্ত হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ৩৯০ কোটি ৮০ লাখ টাকা মোট প্রিমিয়াম আয় করেছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যার মার্কেট শেয়ার ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
১৯৯৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি সর্বশেষ ২০১৭ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। ২০১৬ সালে ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পান এ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালক ৪২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, প্রতিষ্ঠান ২১ দশমিক ৩১, বিদেশী বিনিয়োগকারী ১ দশমিক ৯৬ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৩৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ শেয়ার।
জানা গেছে, মেঘনা লাইফের সচল পলিসি ১০ লাখ ৩২ হাজার ১১৩টি, এর মধ্যে নতুন পলিসি ২৬ হাজার ৮২০টি। সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের সচল পলিসি ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৭টি, এর মধ্যে নতুন পলিসি ১৭ হাজার ৭৬৪টি। এছাড়া হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের নতুন পলিসি ১৭ হাজার ৬০৯টি, পদ্মা ইসলামী লাইফের নতুন পলিসি ২০ হাজার ১৩৭টি, প্রগতি লাইফের নতুন পলিসি ৩১ হাজার ৪২৮টি ও সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নতুন পলিসি ১২ হাজার ৭৫৬টি।
জানা গেছে, প্রাইম ইসলামী লাইফের মোট সচল পলিসির সংখ্যা ২ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫০টি, এর মধ্যে নতুন পলিসি ২৫ হাজার ২৭১টি। প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সচল পলিসি ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৯টি, এর মধ্যে নতুন পলিসি আছে ১০ হাজার ১৪৪টি।