Published at: Bonik Barta, March 28, 2019
মধ্যবিত্তের বিকাশে দেশে দ্রুত বড় হচ্ছে কনজিউমার ইলেকট্রনিকসের বাজার। প্রতি বছর গড়ে ১৫-১৬ শতাংশ হারে বাড়ছে এ বাজারের আকার। বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল ও দেশের কনজিউমার ইলেকট্রনিকস খাতসংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, এরই মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে এ বাজারের আকার, ২০২২ সালে যা ২০ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করবে।
কনজিউমার ইলেকট্রনিকস পণ্যের মধ্যে রয়েছে টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স। বাংলাদেশে ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদক ও বাজারজাতকারীদের তথ্যমতে, এ বাজারের সবচেয়ে বড় অংশ রেফ্রিজারেটরের। ২০১৮ সাল শেষে দেশে রেফ্রিজারেটরের বাজার ছিল ৫৯ কোটি ডলার বা প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার। কনজিউমার ইলেকট্রনিকস বাজারের ৪০ শতাংশই এ পণ্যের দখলে। লাইটক্যাসলের পূর্বাভাস বলছে, ২০২২ সালে দেশে রেফ্রিজারেটরের বাজার সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। যদিও ২০১৭ সালে এ বাজারের আকার ছিল ৪ হাজার ৬২০ কোটি টাকার।
দেশে রেফ্রিজারেটরের বাজার অংশীদারিত্ব বিশ্লেষণ করে লাইটক্যাসল বলছে, ২০১৮ সালে এ বাজারের ৫৪ শতাংশের বেশি ছিল ওয়ালটনের দখলে। যদিও বর্তমানে রেফ্রিজারেটরের বাজারের ৭০ শতাংশ নিজেদের দখলে রয়েছে বলে দাবি ওয়ালটনের। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক উদয় হাকিম বণিক বার্তাকে বলেন, গত বছর দেশের বাজারে বিক্রীত ২৪ লাখ রেফ্রিজারেটরের মধ্যে ওয়ালটনই বিক্রি করেছে ১৬ লাখের বেশি। পণ্যের গুণগত মান ও দাম সাশ্রয়ী হওয়ায় মানুষ আমাদের পণ্যকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বর্তমানে রফতানির প্রক্রিয়াও চলছে।
লাইটক্যাসলের তথ্য অনুযায়ী, ওয়ালটনের পরই রেফ্রিজারেটরের বাজার দখলে এগিয়ে আছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সিঙ্গার বাংলাদেশ। দেশে রেফ্রিজারেটরের বাজারের ১৪ শতাংশ বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের দখলে। এ বাজারের ৪ শতাংশ করে দখলে রেখেছে এলজি বাটারফ্লাই, যমুনা, মিনিস্টার ও মাইওয়ান। এর বাইরে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দখলে রয়েছে ২০ শতাংশ।
যদিও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, মিনিস্টার রেফ্রিজারেটরের বাজার অংশীদারিত্ব রয়েছে ১০ শতাংশের বেশি। এছাড়া ভিশন, সনি র্যাংগস, ইকো প্লাসের মতো স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার দখলও ৫ শতাংশ করে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। উল্লেখযোগ্য বাজার অংশীদারিত্ব রয়েছে হিটাচি, এলজি, ওয়ার্লপুল, কনকা, প্যানাসনিক, অ্যারিস্টন, স্যামসাং, হায়েস, হায়ার ও শার্পের মতো বহুজাতিক ব্র্যান্ডেরও।
রেফ্রিজারেটরের মতোই দ্রুত বাড়ছে টেলিভিশনের বাজার। লাইটক্যাসলের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে টেলিভিশনের বাজার ছিল ৪৪ কোটি ডলার বা প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকার। ২০২২ সালে এটি প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস তাদের। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির তথ্য বলছে, রেফ্রিজারেটরের মতোই দেশে টেলিভিশনের বাজারেও শীর্ষে রয়েছে স্থানীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন। বর্তমানে টেলিভিশনের বাজারের ২৭ শতাংশ দখলে নিয়েছে তারা। যদিও বাজারের ৪৫ শতাংশ ওয়ালটনের দখলে রয়েছে বলে দাবি উদয় হাকিমের। তিনি বলেন, ওয়ালটন দেশের মধ্যবিত্ত ভোক্তাশ্রেণীর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের টেলিভিশন উৎপাদন করছে। তাই ওয়ালটনের টেলিভিশনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে।
বাংলাদেশ ইলেকট্রনিকস মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ওয়ালটনের পরই দেশে টেলিভিশনের বাজার দখলে নিয়েছে সনি র্যাংগস গ্রুপ। তাদের তথ্যমতে, টেলিভিশনের বাজারে সনি র্যাংগসের বাজার অংশীদারিত্ব ৩০ শতাংশের বেশি। তবে লাইটক্যাসলের তথ্যে সনি র্যাংগসের বাজার অংশীদারিত্ব ৩ শতাংশ। টেলিভিশনের বাজারে সিঙ্গারের দখল ৭, মিনিস্টারের ৪, এলজি ৩, ভিশন ও নোভা ২ শতাংশ করে। অন্যান্য ব্র্যান্ডের দখলে রয়েছে ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে স্যামসাং, যমুনা, শার্প, প্যানাসনিক, ফিলিপসসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড রয়েছে।
নগরায়নের ফলে কনজিউমার ইলেকট্রনিকস পণ্যের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে এয়ারকন্ডিশনার। বর্তমানে প্রায় ১৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধিতে থাকা এ পণ্যের বাজার দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ডলার বা ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০২২ সালে এ বাজার ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলে পূর্বাভাস লাইটক্যাসলের। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, বর্তমানে এয়ারকন্ডিশনারের বাজারের সিংহভাগ দখল বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোর। এ বাজারের ৩৫ শতাংশ দখলে নিয়ে এককভাবে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেট্রিকের জেনারেল এয়ারকন্ডিশনার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ বাজার অংশীদারিত্ব চীনের ইলেকট্রোমার্টের ব্র্যান্ড গ্রির। ১৪ শতাংশ বাজার দখল নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিঙ্গার বাংলাদেশ। তবে এ বাজারে বর্তমানে ১০ শতাংশের বেশি ওয়ালটনের দখলে রয়েছে বলে দাবি কোম্পানিটির।
বাজার অংশীদারিত্বে সবার ওপরে থাকা বাংলাদেশে জেনারেল ব্র্যান্ডের এয়ারকন্ডিশনার বাজারজাতকারী এসকোয়্যার ইলেকট্রনিকসের জেনারেল ম্যানেজার মঞ্জুরুল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, মধ্যবিত্তের বিকাশের সঙ্গে দেশে কনজিউমার ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজার বাড়ছে। দেশে এসির বাজারে ১৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি রয়েছে। পণ্যের মানের কারণে মানুষ প্রথমেই জেনারেল এসির কথা ভাবে। সামর্থ্য কম থাকলে হয়তো অন্যটির চিন্তা করছে। ফলে এসির বাজারে আমাদের অংশীদারিত্ব সবচেয়ে বেশি। টিভি-ফ্রিজের ক্ষেত্রে বাজার অংশীদারিত্ব বাড়ানোর চিন্তা করছে এসকোয়্যার।
কনজিউমার ইলেকট্রনিকসের বাজারে তৃতীয় অবস্থানে আছে হোম অ্যাপ্লায়েন্স। ফার্নিচারসহ গৃহকাজে ব্যবহূত এ পণ্যের বাজার বর্তমানে ২৫ কোটি ডলার বা ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০২২ সাল শেষে তা ৩ হাজার ৫৭০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে লাইটক্যাসল। দেশে মধ্যবিত্তের হার বৃদ্ধির সঙ্গে ওয়াশিং মেশিন, ইলেকট্রিক ইস্ত্রিসহ হোম অ্যাপলায়েন্স পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।
ইলেকট্রনিকস ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভুঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, কয়েক বছর ধরেই কনজিউমার ইলেকট্রনিকস পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। মানুষের জীবনকে সহজ করে দিচ্ছে এসব পণ্য। সরকারও এসব পণ্য উৎপাদনে বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে।